Posts

Showing posts from December, 2016

শেষ বিকালে ।। বিশ্বাস

ভেবে ছিলাম কাছে ডেকে বলি তোমার হাতটি ধরে চলি সন্ধ্যার অবসরে তোমাতে চক্ষু মেলি ট্যাক্সি ক্যাবে চড়ে দুরে কোথাও চলে যায় শহরের কোলাহল ছেড়ে ঘন্টা কয়েক। ভেবে ছিলাম কাছে গিয়ে বলি তোমার হাতটি ধরে চলি দুপুরের তপ্ত রোদে খাতার ছায়া ফেলি রিক্সার হুড লাগাতে গিয়ে মাথায় মাথায় ধাক্কা খেয়ে রাগে কেটে যাবে কয়েক ঘন্টা চুপচাপ। ভেবে ছিলাম দুরে থেকে ইসারায় বলি তোমার হাতটি ধরে চলি শেষ বিকালের মেঘে উন্মুক্ত পায়ের বৃষ্টি হোলি বেলা ফুরালে তোমার যাবার পথে দূর থেকে চেয়ে থাকি কতোক্ষন। ভেবে ছিলাম কিছু না বলি আমি বরং একা একাই চলি ভিজে কুঁকড়িয়ে যাক না পাওয়া বাসনা গুলি কতোক্ষন বসে থেকে হঠাৎ হারিয়ে যাই তোমার বিচরন ভুমি হতে গন্তব্যের রথে।

আত্নভোলা ।। বিশ্বাস

ইঁট পাথরের ব্যস্ত নগরীর কোলাহল ছাড়িয়ে সে এক আত্নভোলা পথের ধারে দাঁড়িয়ে দুবাহু বাড়িয়ে আকাশপানে চেয়ে আছে অবিরাম । চোখে তার একগাদা স্বপ্নের আনাগোনা ব্যস্ত ভীষন উদাসী মন - মানুষের তরে ভাবনা বলবে কথা ভুলে দুঃখ-ব্যাথা শ্লোক তব মানবতার মুক্তি গাঁথা সৃজন হবে এমন মানব সমাজ- তাই নিয়ে সকল প্রকার আরাধনা।

একজন প্রেমিকের শ্লোক ।। বিশ্বাস

কত শত বার প্রেমে পড়েও আমি প্রেমিক হতে পারিনি আমার যদি কোন কিছু থেকে থাকে তবে তা অপ্রেমে যার অন্তরে ক্ষরন নাই- অতৃপ্তিরা কাঁদে না তাকে আমি বরং মানুষরুপী শরীর বলব মানুষ নয় অজস্র প্রেমিকার ভিড়ে যাপন করি অনাড়ম্বর জীবন। আমার প্রেমিকারা সব যুদ্ধবন্দিনী দাসী হিসেবে যাদের ভোগ করে চলে শস্যক্ষেত্রে ফসল ফলাতে চাষাবাদ চলে বাধাহীন ইচ্ছা -অনিচ্ছা মুল্যহীন যাদের জমির মালিক সকল কৃষ্টির পুরুষতন্ত্র চাই এমন একটা মন্ত্র - যাতে স্লোগানে স্লোগানে মুখর হবে প্রতিটি হৃদয় পুরুষতন্ত্র নিপাত যাক, প্রেমিকারা সব মুক্তি পাক।

ওকাম্পো বলেছিল ।। বিশ্বাস

বিরামহীন তীর্থযাত্রা - কারাগারবাস - পারিনি - হবেনা জীবন যুদ্ধে আমি এক পরাজিত সৈনিক ওকাম্পো বলেছিল - তুমি বরং ভালবাসতে ভুলে যাও ওরিয়ানার মত দাপিয়ে বেড়াও। বনমালী বিশ্বাস - একজন কবির নাম পান্ডুলিপি ছাড়া আর কি থাকে কবিদের প্রশ্ন করেছিলাম বাকিটুকু নিলাম - জীবন হারিয়ে গেল পড়ে রইল কিছু টুকরো কাগজে কলমের আঁচড় শোনা হয়নি কবি হয়ে ওঠার গল্প। জীবন ঢের দিয়েছে - যা কিছু চাওয়া - অল্প বলেছিল -সত্যের ভাবাবেগ একমাত্র সম্বল আমি তখন - তখন থেকে আজ অবধি মেলায় যায়নি - পুজিনি -পেছন ফিরে চাইনি মিথ্যা শোরগোল ভাল লাগেনা আমার বরং মাতাল হই - প্রশ্ন গিলি একান্তে। ওকাম্পো বলেছিল - তার চেয়ে তুমি বরং নীলগিরি যাও অগভীর জলে সাঁতরাও।

আসতে চেয়েছ তাই অপেক্ষায় আছি ।। কবি বিশ্বাস (বাবা )

তুমি আসতে চেয়েছ তাই অপেক্ষায় আছি বসন্ত থেকে গৃষ্ম পর্যন্ত অপেক্ষায় আছি পাখির বাচ্চারা যেমন খাবারের জন্য বাসায় শুয়ে শুয়ে তার মায়ের আগমন অপেক্ষায় থাকে। চাঁদ যেমন একটু একটু করে বেড়ে পূর্ণিমা পায় আমি ওভাবেই অপেক্ষায় আছি। তুমি আসতে চেয়েছ, তাই অপেক্ষায় আছি। বাতাসে ফুলের গন্ধ বয়ে আনে কল্পনা যেমন একটি সুন্দর কিছু গড়ে একটি প্রেম অথবা একটি সংসার অনুভবে স্পর্শ করি তোমায় বুদ্ধের মত অশোক গাছের নিচে নয় প্রকৃতির প্রেমে বুধ্ব হয়ে প্রকৃতিরূপী ঈশ্বরকে পাবার আশায় নয় আমি আমার খড়ের ঘরে তোমাকে পাবার আশায় ভ্রুন যেমন মাতৃগর্ভে দিনে দিনে বড় হয় আমিও ঠিক ওভাবেই অপেক্ষায় আছি তুমি আসতে চেয়েছ তাই অপেক্ষায় আছি বেকারেরা যেমন চাকরির আশায় অফিসে অফিসে ধর্না দেয় বিপ্লবীরা যেমন বছরের পর বছর ধরে সংগঠনকে গড়ে তুলে আর্টিষ্ট যেমন তুলির আঁচড় টেনে টেনে ছবি বানায় প্যলেসটাইনেরা যেমন মুক্তির জন্য সংগ্রামে রত ল্যাতিন আমেরিকান যেমন বর্নবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার আমিও ঠিক ওভাবেই তোমার অপেক্ষায় আছি বৃদ্ধ অথবা বৃদ্ধারা যেমন মৃত্যুর জন্য দিন গুনে দুঃখীর মা তার মেয়েকে কোলে নিয়ে সন্ধ্যা উঠানে বসে, তার স্বামীর দেহ শ্...

ইস্যু ।। বিশ্বাস

আজকে রাস্তার পাশে পড়ে আছে আমার বোনের ধর্ষিত লাশ আজকে রাজনীতিকের চোখে মুখে লেগে আছে আজন্ম -স্বলজ্জ সুবিধাবাদের পাপ । আজকে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞময় আজকে তোমার জন্য নয় আমার সময় আজকে ধর্ম যার যার উৎসব সবার  তবে ধর্মহীনে আপত্তি তোমার । আজকে গুড়িয়ে ফেলা হল আরও একটি পুরাকির্তী আজকে শরতের অভিজান আজকে পানশালায় নিরিবিলি মজমাস্তি প্রতিটি আজকে দিন গড়ালেই কালকে হয়ে যায়।

সান বাঁধানো ঘাট ।। বিশ্বাস

বিষ বেদনার ঢল-অভ্যস্থ নদীর গতিপথ - চলতে চলতে হাওয়ায় দিক ভ্রম গাছ থেকে একটা হলুদ পাতা খসে পরল জলে ঢেউয়ের ঝাপটা - পরিবেশ গম্ভীর-শান্ত-শঙ্কিত- হঠাৎ নিশ্চুপ হয়ে গেল চতুর্দিক হৃদয়-মননে রক্তধারা বয়ে গেল এক চপট। পাড়ে বসে আছে দুজনাতে- একান্তে ঘন্টা বাজছে ঢং ঢং - ছুটির ঘন্টা ছায়া সুনিবিড় বাতাস পাল্টে দিতে চাওয়া রং মিটি মিটি আলো জ্বলছে অদূরপানে ছুটির ঘন্টা বেজে গেছে কখন - হারাতে চাইছে মন -দুরগগনে । যন্ত্রনার প্রতিচ্ছবি দেখতে - পাশের ভাঙ্গা দেয়াল থেকে খসে পড়া একটা ইঁট মাঝপথে বাধা প্রাপ্ত - নুনে লাগা আর একটা ইঁট না না করছিল ক্ষয়ে ক্ষয়ে পাড়টা ট্যারা-ব্যাকা প্রায় - সান বাঁধানো ঘাটটা আজ আর তেমন নেই ।

ঠাঁই দাঁড়িয়ে ।। বিশ্বাস

কবে থেকে ঠাঁই দাড়িয়ে আছি - এক পলক দেখবো তোমার লাজে রাঙা মুখ ইদানিং ঘরটা ভীষন ফাঁকা ফাঁকা লাগে ক্লান্তদেহ পড়ে থাকে এলোমেলো গড়াগড়ি খাই - প্রহর গুনি রাত গভীর থেকে গভীরতর হয় । লন্ঠন কেবল স্মৃতি এখন চাঁদ দেখে রাত কাটেনা আর কতোকাল পুবের আকাশে সোনালী আলো দেখিনা " হ্যালো তুমি কি এখনো ঘুমোচ্ছো? দ্যাখো আজকের সকালটা ভীষন মিষ্টি ওই শুনছো! " কেউ বলেনা আর । ভোর হলে - ৩টা বেজে গ্যাছে বিকেলটা যাই প্রতীক্ষায় আমি ঠাঁই দাড়িয়ে আছি - স্থির এক পলক দেখবো তোমার লাজে রাঙা মুখ ঠিক এখানেই ছিলাম গতরাতেও দরজায় ঠক ঠক শব্দ করছি অনবরত ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ নেই আমি দাড়িয়ে আছি অনন্তকাল।

চরম উদাস ।। বিশ্বাস

ঠিক কবে থেকে মনে নেই উদাসীনতা গ্রাস করেছে বহুকাল আগে যবে থেকে সত্যকে চিনতে বলেছ যেদিন পথটা দেখিয়ে দিয়েছ ভাবতে শিখিয়েছ চারিদিকে যা কিছু দেখি উল্টো রথ ভুলে গেছে অনেকে অনেকে ভুলতে বসেছে পথ বড্ড বেশি দুঃখ হয় তখন তখন আমি নাকি বিভ্রান্ত কবে সত্য সঠিক ছিল কবে পথ মুক্ত ছিল একধাপ এগিয়ে ছিল বটে আজ এ শুধু ধাঁধা ধর্মের গন্ডিতে পড়েছে বাঁধা মোল্লা -পুজারীর হাতে ঝান্ডা চারিদিকে জরাগ্রস্থ - ধমনীতে দুর্নীতি শিরায় শিরায় বাহুনীতি। পেট পুজারীরা এখানে ঠিকাদার যে যেভাবে পিষে চলেছে শ্রেনীভেদে বুভুক্ষের খাবার ছিনিয়ে খাচ্ছে কেউ কেউ ঘুমিয়ে কাটাচ্ছে জীবনভর আমাকে প্রশ্ন করা হলে আমি বার বার বলি তুমি মিথ্যা ভুল পথের যাত্রা তোমার। এই সমাজের অরাজকতা দেখতে দেখতে আমি ভীষন রকম ক্লান্ত।

কলঙ্ক ।। বিশ্বাস

জীবন খাতার পাতাগুলো সাদাই রয়ে গেছে আমি চাই কেউ এসে উল্টে-পাল্টে দেখুক কলঙ্কের কালি লেপ্টে দিক সর্বাঙ্গে সামান্য দাগ কেটে দিক পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় বাহারী রং আমি চাই না - বলপেনই যথেষ্ট কাল কালির আঁচড়েই তৃৃপ্ত হতে চাই- হৃদয় গগন। পেন্সিল হলেও চলবে - চাইলেই মুছে দেবে।

বৃষ্টির গান ।। বিশ্বাস

অঝর ধারায় আজি ঝরিছে বরষা তোমার ছোয়ায় মনে আনে উষ্ণতা টুপ টুপ শব্দে অঝর বৃষ্টি ধারা জলের ফোটায় আজকে পাগল পারা। চলো মাতাল হই ভিজি দুজনে প্রসারিত হাতে চাহিয়া আকাশ পানে ধুয়ে যাক শরীর-মনের যত পাপ জাগে মোর প্রানে এ কোন উত্তাপ। চোখে মুখে লাগুক বৃষ্টির ছাপ উড়ে যাক সকল দুঃখ ব্যাথার তাপ চলো ভালবাসি মোরা প্রকৃতির বানে অনিন্দ সুন্দর বৃষ্টি ধারার গানে গানে।

শব ।। বিশ্বাস

রাস্তার পাশে পড়ে আছে বন্ধুর শবদেহ শকুনেরা ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে হাড় হতে মাংশ পচে-গলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সেই গন্ধে তোমার নাক সিঁটকোয়।  পুঁতে দেয়ার মানুষের বড্ড অভাব বন্ধুকে তুমি চিনো না -চিনতে চাও না তোমার চোখ যাই না সেখানে - নিজেকে নিয়েই ব্যাস্ত তুমি গড়তে প্রাচুর্য পাহাড়সম তোমার সময় হয় না পাশের বাসার মানুষটার জন্য নিজেকে নিয়েই তুমি ধন্য তোমার সময় নেই বন্ধুর জন্য লাশের জন্য একদিন ঠিক এভাবেই তোমার দেহ খুটে খুটে খাবে শকুনের দল তোমারও ঠিক একই দশা হবে সেদিন সেদিন হয়ত কাক-পক্ষীও ঠোকর পাড়বে পচে-গলে খসে খসে পড়বে হাড়-মাংশ।